কব্জিবিহীন জান্নাতুলের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন

Dailybdnews360.Com
1. ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ / ২৭৮ বার পঠিত

আশুলিয়া প্রতিনিধি : আশুলিয়ার নবীনগর এলাকায় একটি ভাড়া বাসার ছাদে বিদ্যুৎ সঞ্চালক তারে জড়িয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের দুই হাত পুড়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারী। পরে জানুয়ারী মাসের ২৭ তারিখে তার হাতের কব্জিসহ কেটে ফেলা হয়। অপরদিকে বাবার সাথে মায়ের বিচ্ছেদ হওয়ায় মামা ও খালার সাথে ভাড়া বাসায় থেকে কোন মতে দিনপাড় হচ্ছে তাদের। এতোসব প্রতিবন্ধকতাও দমাতে পারেনি জান্নাতুলকে। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দুই হাতের কব্জিবিহীন হাতে লিখে এবার এইচএসসিতে জান্নাতুল পেয়েছেন জিপিএ-৫। এর আগে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৭২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলো জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এই শিক্ষার্থী।

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মা নিলুফা বেগম জিপিএ-৫ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

জান্নাতুল ফেরদৌস আশুলিয়ার বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ হতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে পাশ করে।

জান্নাতুল ফেরদৌস কুমিল্লা জেলার চাটখিল উপজেলাধীন মানিকপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে। সে তার পরিবারের সাথে আশুলিয়ার পল্লীবিদুৎ এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে।

বাব-মায়ের একমাত্র সন্তান জান্নাতুল। বাবার সাথে মায়ের বিচ্ছেদ হওয়ায় মামা ও খালার সাথে ভাড়া বাসায় থেকে কোন মতে দিনপাড় হচ্ছে তাদের। যেহেতু মামা-খালার বাসায় থেকে তার পড়ালেখা, সেহেতু তাদের পক্ষে লেখাপড়ার অতিরিক্ত খরচ যোগাতে হিমসীম খেতে হয়েছে। মা তাকে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়ে অনেক কষ্ট করে ফরম পূরণে টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন। তার শিক্ষাজীবন টাকার অভাবে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু কোন বাধাই তাকে আটকাতে পারিনি।

এ ব্যপারে জান্নাতুল ফেরদৌসের মা নিলুফা বেগম জানান, তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে। যার কারণে পড়াশোনার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ। মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার খরচ বহন করা তার জন্য খুবই কষ্টসাধ্য। তাই তিনি সবার নিকট জান্নাতুলের জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন।

এ সময় তিনি আরও বলেন, অনেক সময় অনেকে আমাদেরকে সাহায্য সহযোগিতার কথা বললেও বাস্তবে তেমন কেউ এগিয়ে আসেনি। জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। আমি ডাক্তার হয়ে সকলের সেবা করতে চাই। অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমার বাবা না থাকায় মা আমাকে অনেক কষ্ট করে পড়াচ্ছেন। তার একার পক্ষেও সম্ভব না। আমার বড় খালাও আমাদের অনেক সহযোগিতা করেন। বর্তমানে তাদের সাথেই থাকি। খালা-খালুই বর্তমানে আমার দেখাশোনা করেন।

জান্নাতুল আরও বলেন, আমি অনেক কষ্টে হাজী মতিউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করি। পরে আমার পরিবারের পক্ষে আমার কলেজের পড়াশোনা চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান পড়াশোনার জন্য আমাকে অনেক সহযোগিতার করেছেন। পাশাপাশি আমার স্কুলের স্যার-ম্যাডামরাও আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সকলের কাছে দোয়া চাই।

সংবাদটি শেয়ার করুন: